ঢাকা , সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪ , ৯ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

পাহাড়ের লটকনে লাখ টাকা আয়ের স্বপ্ন

দিনাজপুর টিভি ডেস্ক
আপলোড সময় : ১৭-০৮-২০২৪ ০৪:৫০:৫৭ অপরাহ্ন
আপডেট সময় : ১২-১০-২০২৪ ১০:৫৬:১৮ অপরাহ্ন
পাহাড়ের লটকনে লাখ টাকা আয়ের স্বপ্ন
পাহাড়ের মাটিতে সোনা ফলে। লুকিয়ে আছে কৃষির অপার সম্ভাবনা। একসময় অবহেলিত পাহাড় যেন কৃষি ও কৃষকের জন্য হয়ে উঠেছে আশির্বাদ। আম-লিচুর পরে পাহাড়ের আরেক সোনা ‘লটকন’। পাহাড়ের মানুষ লটকন চাষে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির স্বপ্ন দেখছে।

একসময় পাহাড়ের ঢালু আর বনে-জঙ্গলে জন্ম নেওয়া গাছে থোকায় থোকায় ঝুলে থাকতো এ ফল। কারো কাছেই তেমন কদর ছিল না। কালের বিবর্তনে পাহাড়ে দিন দিন ব্যাপক হারে চাহিদা বাড়ছে টক-মিষ্টি ফলটির। পাশাপাশি পাহাড়ি বাজার ছাড়িয়ে সমতলের বিভিন্ন জেলায় লটকনের ব্যাপক চাহিদা তৈরি হয়েছে।

স্থানীয় বাঙালিদের কাছে লটকন নামে পরিচিত ফলটি চাকমা ভাষায় ‘পচিমগুল’, মারমা ভাষায় ‘ক্যানাইজুসি’ ও ত্রিপুরা ভাষায় ‘খুচমাই’ নামে পরিচিত। জুন মাসের মাঝামাঝি পাকতে শুরু করে এ ফল। এ সময়ে বাজারেও আসতে শুরু করে। গাছের গোড়া থেকে শুরু করে প্রতিটি ডালে থোকায় থোকায় ঝুলতে দেখা যায়। পুষ্টিগুণসমৃদ্ধ লটকন ছোট-বড় সবার প্রিয়।

পাহাড়ে আম-লিচুর বাণিজ্যিক চাষাবাদ হলেও পিছিয়ে আছে লটকন। পার্বত্য খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গা, রামগড়, দীঘিনালা, গুইমারা ও পানছড়িসহ বিভিন্ন উপজেলায় ব্যক্তি উদ্যোগে স্বল্প-পরিসরে বাড়ির আঙিনা আর পাহাড়ের ঢালুতে লটকনের চাষাবাদ হচ্ছে।সম্প্রতি পাহাড়ে বাণিজ্যিকভাবে লটকন চাষে স্বপ্ন দেখছেন অনেকেই। কম পরিশ্রম আর কম পুঁজিতে বেশি লাভের সুযোগ থাকায় লটকন চাষে আগ্রহী হচ্ছেন অনেকেই।

 খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, স্থানীয় বাজারে ব্যাপক চাহিদা সম্পন্ন টক-মিষ্টি ফল লটকন প্রতি কেজি ১০০-১২০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।কয়েক বন্ধুকে সঙ্গে নিয়ে পানছড়ির যুগলছড়ি মৌজায় ৭শ’র বেশি গাছের লটকন বাগান গড়ে তুলেছেন শিক্ষিত বেকার তরুণ রুমেল মারমা। লিজ নেওয়া জমিতে ঝিরির পাশে গড়ে তুলেছেন বাগান।

 প্রতিটি গাছের গোড়া থেকে শুরু করে ডালপালায় ঝুলে আছে অসংখ্য লটকন। ছড়া এবং ঝিরির ধার লটকন চাষের জন্য বেশ উপযোগী জানিয়ে উদ্যোক্তা রুমেল মারমা বলেন, ‘মূলত ঠান্ডা জায়গাতেই লটকন বেশ ভালো হয়।’

লটকন চাষি প্রতিভা ত্রিপুরা বলেন, ‘লটকন চাষে তেমন কোনো পরিচর্যার প্রয়োজন হয় না। কম পুঁজি ও কম পরিচর্যায় ভালো ফলন পাওয়া যায়। আম বাগানের পাশাপাশি স্বল্প পরিসরে লটকন বাগান করেছি। লটকনের ফলন ভালো হয়েছে।

 এরই মধ্যে স্থানীয় পাইকাররা লটকন কিনতে শুরু করেছেন। একেকটি গাছের লটকন ৫-৭ হাজার টাকায় বিক্রি করতে পারবো।মাটিরাঙ্গার মোহাম্মদপুর গ্রামের মো. আলী মিয়ার বাড়ির পাশেই পাহাড়ের ঢালুতে গোটা বিশেক লটকন গাছ আছে। প্রতিটি গাছে ঝুলছে সোনালি লটকনের থোকা। লটকন বিক্রি থেকে মোটা অঙ্কের অর্থ আয়ের স্বপ্ন দেখছেন তিনি।

ব্যাঙমারা ও সাপমারা থেকে মাটিরাঙ্গা বাজারে লটকন বিক্রি করতে আসা কুহেলী ত্রিপুরা ও ঝর্ণা ত্রিপুরা জানান, তাদের নিজেদের বাড়ির পাশে ১০-১৫টি লটকন গাছ আছে। প্রতিটি গাছেই ব্যাপক ফল এসেছে। লটকন বিক্রি করে লাখ টাকা আয়ের স্বপ্ন দেখছেন তারা।মাটিরাঙ্গা উপজেলা 

কৃষি অফিসার কৃষিবিদ মো. সবুজ আলী জানান, বেশি গাছপালা ও ছায়া থাকায় পাহাড়ি এলাকার মাটি লটকন চাষের জন্য খুবই উপযোগী। এটি উচ্চ ফলনশীল কৃষিপণ্য। বাজারে এর চাহিদাও বেশি। কম পুঁজি ও পরিশ্রমে বেশি লাভবান হওয়ায় কৃষকেরা বাণিজ্যিকভাবে লটকন চাষে আগ্রহী হয়ে উঠছেন।

নিউজটি আপডেট করেছেন : Dinajpur TV

কমেন্ট বক্স

এ জাতীয় আরো খবর

সর্বশেষ সংবাদ